দানের হাতটি খুলি, প্রতিদান দেবেন আল্লাহ
রোজার শেষে নাজাত পাব/ এই সায়েমের চাওয়া,/ খোদার কাছে হাত পেতেছি/ মিলবে পরম পাওয়া।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন- ‘আসসাওমু লি, ওয়া আনা আজজি বিহি। রোজা আমার জন্য, আমিই এর পুরস্কার দেব।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ওয়া আনা উজযা বিহা। আমি নিজেই তার পুরস্কার।’ এ কথায় বোঝা যায়, রোজার পুরস্কার কোনো বৈষয়িক বিষয় নয়। অথচ আমরা নবীজির (সা.) উম্মত হয়েও রমজানে কতটুকু দুনিয়ার ফায়দা উঠাব, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
বছর তিরিশ আগের কথা। সকালে পণ্য মাথায় করে ফেরি করতে বের হয়েছেন এক ভাই। আধা ঘণ্টা পরই ফেরত চলে আসেন। এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে দেখে ছোট ভাই জানতে চাইলেন, স্বাস্থ্য খারাপ নাকি আপনার? তিনি বলেন, তা নয়, আমার সারা দিনের কামাই হয়ে গেছে তাই চলে এসেছি। এখন বেরিয়ে যাব দাওয়াতের (তাবলিগ) কাজে।
আসলে আমাদের দায়িত্ব সাধ্যানুযায়ী কাজ করে যাওয়া। বাকি কাজ আল্লাহ করবেন। ওয়াল্লাহু রাজ্জাকু জুল কুওয়্যাতিল মাতিন। একমাত্র আল্লাহই রিজিকদাতা এবং রিজিক পৌঁছানোর মালিক। আমরা রিজিকের পেরেশানিতে না থেকে রিজিকওয়ালার দেয়া দায়িত্বের পেরেশানিতে থাকলে তিনিই তো আমার ব্যবস্থা করে দেবেন।
আল্লাহ বলেন, ‘ওয়া মাই ইয়া তাওয়াক্কাল আলাল্লাহি, ফা হুয়া হাসবুহু। যে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল থাকে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ কিন্তু এ কথাগুলো আমরা মুখে বলি ঠিকই। বাস্তবে আমল করার সাহস দেখাই না। অনেক সময় দুনিয়ার সম্পদ আমাদের গোমরাহ করে ফেলে। হাদিসে আছে- ‘হুব্বুদ্দুনিয়া রাসু কুল্লু খাত্তায়িন, দুনিয়ার মহব্বত সব পাপের মূল।’ আল্লাহ বলেন, ‘লা তুলহিহিম তিজারাতুন ওয়া বাইউন আন জিকরিল্লাহি। তোমাদের ব্যবসা ও বেচাকেনা যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাদের গাফেল না রাখে।’
এই করোনাকালের জেহাদে আমাদের ভিআইপি, সিআইপিদের দেখা যাচ্ছে না। মানুষের এই বিপদে মনোবল বাড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনগণের সামনে হাজির হওয়া দরকার ছিল। হয়তো তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কিছু টাকা-পয়সা দিয়েই তৃপ্তবোধ করছেন পুঁজিপতিরা। করোনায় বা অন্য যে কোনোভাবেই হোক, মৃত্যু হলে সম্পদ কে খাবে? মৃত্যু যদি করোনার অসিলায় থাকে, ঠেকাবে কে?
মরে গেলে সম্পদ খাবে লোকে, দেহ খাবে পোকে। তাই আসুন রোজার মাধ্যমে দেহকে শুদ্ধ করে তুলি। যাতে দেহটি নবী-রাসূলদের মতো মর্যাদা পায়। দান-খয়রাত সদকা করে মানুষের মনে জায়গা করে নিই, যাতে মরে গেলে আমার উত্তরসূরিরা আমার সম্পদ ভোগ-বিলাসে না লাগিয়ে মানবতার সেবার কাজে লাগিয়ে নানা দাতব্য সংস্থা গড়ে তুলে জান্নাতে যাওয়ার অসিলা বানায়। আমিন।